Monthly Archives: অগাষ্ট 2013

তিল পরিমাণ জায়গাতে কী কুদরতিময়

তিল পরিমাণ জায়গাতে কী কুদরতিময়।
একজন নাড়া জগৎ জোড়া সেইখানেতে বারাম দেয়।।

বলবো কী সে নাড়ার গুণ বিচার
চার যুগে রূপ নবকিশোর
সেই দেশে নাই অমাবস্যে
দীপ্তকারে সদা রয়।।

ভাবের নাড়া ভাব দিয়ে বেড়ায়
যে যা ভাবে তাই হয়ে দাঁড়ায়
রসিক যারা বসিয়ে তারা
পেঁড়োর খবর পিড়েয় পায়।।

শতদল সহস্রদলের দল
নাড়া ঠাকুর নাড়ছে বসে কল
লালন বলে জানবি কবে
কল খাটিয়ে নাড়া রয়।।


তিন দিনের তিন মর্ম জেনে

তিন দিনের তিন মর্ম জেনে।
রসিক সাধনে সাধে একই দিনে।।

অকৈতব সে ভেদের কথা
কইতে প্রাণে লাগে ব্যথা
না কইলে জীবের, নাইকো নিস্তার
বলি সেই জন্যে।।

তিনশো ষাট রসের মাঝার
তিন রস গণ্য হয় রসিকার
সাধলে সে করণ, এড়াবে শমন
এই ভুবনে।।

অমাবস্যায় প্রতিপদ
দ্বিতীয়ার প্রথমে সে তো
লালন বলে তাহি, আগমন সেহি
যোগের সনে।।


তারে চিনবে কেরে এই মানুষে

তারে চিনবে কেরে এই মানুষে।
মেরে সাই ফেরে যে রূপে সে।।

মায়ের গুরু পুত্রের শিষ্য
দেখে জীবের জ্ঞান নৈরাশ্য
কি বা তার মনের উদ্দেশ্য
ভেবে বুঝা যায় কিসে।।

গোলকে অটলবিহারী
ব্রজপুরে বংশীধারী
হলো নদীয়াতে অবতারি
ভক্তরূপে প্রকাশে।।

আমি ভাবি সব নৈরেকার
কে গো ফেরে স্বরূপ আকার
সিরাজ সাই কয় লালন তোমার
কই হল রে সে-দিশে।।


তারে কি আর ভুলতে পারি আমার এই মনে

তারে কি আর ভুলতে পারি আমার এই মনে।
আমি যেদিকে ফিরি সেই দিকে হেরি রূপের মাধুরী দু’নয়নে।।

তোরা বলিস কালো কালো
কালো নয় সে চাঁদের আলো
সে যে কালাচাঁদ, নাই এমন চাঁদ
সে চাঁদের তুলনা কি তাইরি সনে।।

দেবের দেব শিবভোলা
তার গুরু ঐ চিকনকালা
তোরা বলিস চিরকাল, তাইরি গো রাখাল
সে কেমন রাখাল জান গা বেদ-পুরাণে।।

সাধে কি মজেছে রাধে
সেই কালার প্রেমফাঁদে
সে ভাব তোরা কি জানবি, বললে কি মানবি
লালন বলে শ্যামের গুণ রাই জানে।।


তা কি মুখের কথায় হয়

তা কি মুখের কথায় হয়।
চেতন হয়ে সাধন কর রসিক মহাশয়।।

আহল্লাদে পাখি ধর রে
অমনি মত ধরতে হয় রে
অনুরাগের আঠা দিয়ে
লাগাও গুরুর রাঙ্গা পায়।।

কানাবগি থাকে যেমন
থাকতে হয় রে তেমন
ও সে চিলের মত ছোঁ মারিয়ে
আপন বাসায় লয়ে যায়।।

ফকির লালন বলে
তা কি মুখের কথায় মেলে
ও সে দুই দেহে এক দেহ হলে
তবেই সে ধন পায়।।


দিনের দিন হল আমার দিন আখেরি

দিনের দিন হল আমার দিন আখেরি।
আমি ছিলাম কোথা এলাম হেথা
আবার যাব কোথা সদাই ভেবে মরি।।

বাল্যকাল খেলাতে গেল
যৌবনে কলঙ্ক হ’ল
বৃদ্ধকাল সামনে এল
মহাকাল এসে করল অধিকারী।।

বসত করি দিবারাতে
ষোলজন বোম্বেটের সাথে
আমায় যেতে দেয় না সরল পথে
কাজে কামে করে দাগাদারী।।

যে আশায় এই ভবে আসা
আশায় প’লো ভগ্নদশা
লালন বলে হায় কী দশা
আমার উজান যেতে ভেটে প’লো তরী।।


দিন থাকতে মুরশিদ রতন চিনে নে না

দিন থাকতে মুরশিদ রতন চিনে নে না।
এমন সাধের জনম বয়ে গেলে আর হবে না।।

মুরশিদ আমার বিষয় আদি
মুরশিদ আমার গুণের নিধি
পারে যেতে ভবনদী
ভরসা ওই চরণখানা।।

কোরানে ছাপ শুনিতে পাই
অলিয়েম মুরশিদ সাই
ভেবে বুঝে দেখ মনুরায়
মুরশিদ হন তিনি কোনজনা।।

মুরশিদ রতন চিনলে পরে
চিনা যাবে অচেনারে
লালন বলে মূলাধারে
নজর হবে তত্‍ক্ষণা।।


দস্তখত নবুয়ত যাহার হবে

দস্তখত নবুয়ত যাহার হবে।
কী করিবে ফানাফিল্লা সকল ভেদ জানা যাবে।।

পুসিদার ভেদ জানতে পারলে
নবুয়ত তার অমনি মেলে
কেতাব-কোরানে না পাইলে
দেল-কোরানে সব পাবে।।

বার লাখ চব্বিশ হাজার
বহিছে দেখ দম সবাকার
উনকোটি ছাপান্ন হাজার
পশমে এই দেহটি চলবে।।

এখন জুয়ো খেলায় মত্ত হয়ে
কাদিতে হবে সব হারায়ে
লালন বলে আমার ভাগ্যে
না জানি কী করিবে।।


মক্করউল্লার মক্কর কে বুঝিতে পারে

মক্করউল্লার মক্কর কে বুঝিতে পারে।
আপনি আল্লা আপনি ওলি আপনি আদম নাম ধরে।।

পর দিগের মালেক সবার
ভবের ঘাটে পারের কাণ্ডার
তাইতে করিম রহিম নাম তার
প্রকাশ সংসারে।।

কোরানে বলেছে খাঁটি
ওলিয়েম মোরশেদ নামটি
আহাদ আহাম্মদ সেটি
মেলে কিঞ্চিৎ নজিরে।।

আলেফ যেমন লামে লুকায়
আদমরূপ তেমনি দেখায়
লালন বলে ভাব জানতে হয়
মুরশিদ জবান ধরে।।


মরি রে এক ব্যাধ বটে হাওয়ায় ফাঁদ পেতেছে

মরি রে এক ব্যাধ বটে হাওয়ায় ফাঁদ পেতেছে।
দেখলে রে চমৎকার প্রাণ বাঁচা ভার সেই ফাঁদে যে পড়েছে।।

ইনিয়ে সেই ফাঁদের কথা
যেমন কাক মারিতে কামান পাতা
আরম্ভ করেছে;
কত ব্রহ্মা-বিষ্ণু-নর-নারায়ণ
সেই ফাঁদে যে পড়েছে
শুনিয়ে ফাঁদে বেধেছে।।

পাতিয়ে সে ফাঁদের ঢোয়া
ব্যাধ বেটা দিচ্ছে খেয়া
লোভের চার খাটায়ে;
কত কামিলোভী পড়ছে ধরা
চার খাইবার আশে।।

সিরাজ সাই কয় অর্থবচন
জন্ম-মৃত্যুর ফাঁদ রে লালন
এড়াবি তুই কিসে;
যে জন জ্যান্তে মরে খেলতে পারে
সেই সে যাবে বেচে।